Health

অ্যাজমা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক, আপনি অবশ্যই অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি রোগের নাম শুনে থাকবেন। মূলত এ ধরনের রোগ গুলো হলো একটি মানুষের শরীরের মধ্যে শ্বাসনালীর অসুখ। কোন কারনে যদি একজন ব্যক্তির শ্বাসনালী অতিরিক্ত পরিমাণে সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। কিংবা কোন একজন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ে। তখন সেই ব্যক্তির শরীরে শ্বাস চলাচলের পথে এক ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়। আর যখন এই ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়। তখন সেই ব্যক্তির শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। মূলত এই ধরনের রোগ কে বলা হয়ে থাকে, অ্যাজমা কিংবা শ্বাসকষ্ট। আজকের আর্টিকেলের বিস্তারিত আলোচনার বিষয় অ্যাজমা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

এই ধরনের অ্যাজমা রোগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এবং কোন কারনে যদি আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ এই ধরনের অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন উক্ত ব্যক্তি কে তাৎক্ষণিক ভাবে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। নতুবা পরবর্তী সময়ে সেই ব্যক্তির নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আর শুধুমাত্র চিকিৎসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং যখন একজন ব্যক্তির শরীরে এই অ্যাজমা নামক রোগের লক্ষণ দেখা দিবে। তখন উক্ত ব্যক্তি কে আরো বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।

মূলত আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব যে। অ্যাজমা রোগ কাকে বলে, আর যদি কোন একজন ব্যক্তির শরীরে এই ধরনের রোগের লক্ষণ দেখা যায়। তাহলে উক্ত ব্যক্তি কিভাবে চিকিৎসা নিবে। এবং সেই ব্যক্তি কে কি কি নিয়ম মেনে চলতে হবে তার সব গুলো বিষয় নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই আপনি যদি এই অ্যাজমা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য গুলো বিশদ ভাবে জেনে নিতে চান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

অ্যাজমা কি?

যেহেতু আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাকে অ্যাজমা রোগের সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেহেতু সবার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে যে, এই অ্যাজমা কি। আর যখন আপনি এই বিষয় টি জানতে পারবেন। তখন আপনার আজকের আলোচিত পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। তাই চলুন সবার আগে জেনে নেওয়া যাক যে, অ্যাজমা কি।

আমরা সবাই হাঁপানি রোগের নাম শুনেছি। তবে এই হাঁপানি রোগের আরেক নাম হলো, অ্যাজমা। আর যখন একজন ব্যক্তি এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। তখন সেই ব্যক্তির শ্বাসনালী তে এক ধরনের অসুখের সৃষ্টি হয়। যার ফলে উক্ত ব্যক্তি সঠিক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারেনা। অনেক সময় নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। মূলত এই শ্বাসনালীর অসুখ কে বলা হয়ে থাকে, হাঁপানি কিংবা অ্যাজমা।

অ্যাজমা রোগের লক্ষণ

যখন একজন ব্যক্তির শরীরে অ্যাজমা নামক এই রোগের প্রদুর্ভাব দেখা যাবে। তখন উক্ত ব্যক্তির মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ থেকে বোঝা যাবে যে। সে ব্যক্তিটি আসলে এজমা রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা। চলুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, অ্যাজমা রোগের লক্ষণ গুলো কি কি।

  1. অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রচুর পরিমাণে কাশি হবে।
  2. যখন সেই ব্যক্তি শ্বাস নিবে তখন সাধারণ মানুষের মতো শ্বাস নিতে পারবে না অর্থাৎ শ্বাসকষ্ট হবে।
  3. এর পাশাপাশি শ্বাস নেয়ার সময় এক ধরনের শব্দ হবে যা একেবারেই অস্বাভাবিক।
  4. অনেক সময় অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির নাক বন্ধ হয়ে যায়।
  5. যখন একজন ব্যক্তি এই অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হবে। তখন সেই ব্যক্তির খুব ঘন ঘন জ্বর হবে।
  6. অ্যাজমা হলে জ্বর হওয়ার পাশাপাশি উক্ত ব্যক্তির বুকের মধ্যে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হবে।
  7. এগুলো ছাড়াও বুকের মধ্যে এক ধরনের চাপা ব্যথা অনুভূত হবে।
  8. যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে অ্যাজমার উপস্থিতি থাকবে। তখন সেই ব্যক্তির এলার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাবে।
  9. অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির বুক অনেক ভার অনুভব করবে।

উপরের আলোচনায় অ্যাজমা রোগের লক্ষণ গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আর যখন আপনি কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে এই লক্ষণ গুলো দেখতে পারবেন। তখন আপনি নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, সেই ব্যক্তি আসলে অ্যাজমা নামক রোগে আক্রান্ত।

আরো পড়ুনঃ টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ সমূহ এবং প্রতিকার

অ্যাজমা কেন হয়?

সত্যি বলতে একজন ব্যক্তি কি কারনে অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয় সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে অনেক অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মতে এলার্জি, তামাকের ধোয়া এবং রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থের কারণে এই ধরনের রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে। এবং যখন এ ধরনের রোগের উৎপত্তি হয়। তখন ধীরে ধীরে ক্রমাগত ভাবে এই রোগের প্রদুর্ভাব বাড়তে থাকে। আর বয়সের দিক থেকে একবারে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষ পর্যন্ত। যে কোনো বয়সের মানুষ এই অ্যাজমা নামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। 

তবে ভালো লাগার মত একটি বিষয় হলো যে। একজন ব্যক্তির মধ্যে যখন অ্যাজমা রোগের লক্ষণ দেখা দিবে। তখন সেই ব্যক্তি এই রোগে মারা যাওয়ার মত কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না নিতে পারেন। তখন ওই ব্যক্তি অনেক কষ্ট অনুভব করবে। তাই যখন কোন একজন ব্যক্তির মধ্যে অ্যাজমার উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারবেন। তখন অবশ্যই সেই ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করবেন।

অ্যাজমা কি পুরোপুরি ভালো হয়?   

এখন আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যাদের মনে একটি প্রশ্ন জেগে থাকবে। আর সেই প্রশ্নটি হল যে, অ্যাজমা কি পুরোপুরি ভালো হয়। তো যাদের মনে এই ধরনের প্রশ্ন জেগে থাকবে। তাদের উদ্দেশ্যে করে বলবো যে, যখন একজন ব্যক্তি এই অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হবে। তখন উক্ত ব্যক্তির তাৎক্ষণিক ভাবে দ্রুততার সাথে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি আপনি সঠিক সময় চিকিৎসা নিতে পারেন। তাহলে অ্যাজমা থেকে পুরো পুরি ভাবে সরিয়ে ওঠা সম্ভব। 

কিন্তু আপনার শরীরে যদি দীর্ঘদিন থেকে এই অ্যাজমার উপস্থিতি থাকে। তবে আপনার পুরোপুরি ভাবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশেই কমে যাবে। তাই যখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে, আপনার শরীরে অ্যাজমার উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছে। ঠিক তখনই আপনাকে অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

অ্যাজমা রোগীর খাবার    

আমি উপরে একটা কথা বলেছি যে, একজন ব্যক্তির মধ্যে যখন অ্যাজমা এর উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে। তখন সেই ব্যক্তির সঠিক চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর সে কারণেই মূলত একজন অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত রোগীর খাবারের দিক থেকেও অনেক সতর্ক থাকতে হবে। মূলত এমন কিছু খাবার রয়েছে। যে খাবার গুলো খেলে অ্যাজমার প্রদুর্ভাগ একটু হলেও কমানো যায়। যেমন:

  1. লেবু 
  2. মধু 
  3. ইউক্যালিপটাস গাছ হতে সংগ্রহ করা তেল 
  4. রসুন 
  5. ডুমুর 
  6. আদা 
  7. সরিষার তেল 
  8. কফি 
  9. পেঁয়াজ 
  10. শ্যামন মাছ

তো উপর আপনি যে খাবারের নাম গুলো দেখতে পাচ্ছেন। অ্যাজমা হওয়ার পরে আপনি যদি এই খাবার গুলো নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে আপনার এই অ্যাজমা এর আক্রমণ একটু হলেও কমে যাবে।

অ্যাজমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

যখন আপনার অ্যাজমা নামক রোগ হবে। তখন চিকিৎসা করার পাশাপাশি আপনাকে বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা অনুসরণ করতে হবে। মূলত এই ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতিতে আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেমন,

  1. কোন প্রকার ঠান্ডা খাবার অথবা আইসক্রিম খাওয়া যাবে না।
  2. আপনার বাড়িতে পোষা কুকুর অথবা পোষা বিড়াল থাকলে সেটিকে নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে।
  3. আপনি যাতে মানসিক চাপে না থাকেন সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে।
  4. ঘরের মধ্যে কোন প্রকার কার্পেট ব্যবহার করবেন না।
  5. আপনি যে বিছানাতে ঘুমাবেন সেই বিছানার বালিশ তোষক ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে।
  6. সময় পেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম করবেন।
  7. ধূমপান একেবারেই পরিহার করতে হবে।
  8. উন্নত ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেকআপ করে নিতে হবে।
  9. অ্যাজমার ওষুধ সর্বদাই সাথে রাখার চেষ্টা করবেন।

তো উপরোক্ত পদ্ধতি গুলোর দিকে খেয়াল রাখলে। আপনি অ্যাজমা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারবেন। তবে এই ঘরোয়া চিকিৎসা করার পাশাপাশি অবশ্যই উন্নত ডক্টরের শরণাপন্ন হওয়ার চেষ্টা করবেন।

অ্যাজমার স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি

যদি আপনি অ্যাজমা রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ওষুধ খেতে হবে। কোন কারনে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে ওষুধ খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর আপনি আসলে কোন গুলো ওষুধ খাবেন। সেটা জানার জন্য অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাবেন। এবং তিনি আপনাকে চেকআপ করার পরে ওষুধের নাম বলে দিবে।

ধন্যবাদ আপনার অনুসন্ধানের জন্য এবং আমাদের সাইটে ভিজিট করার জন্য। আশাকরি আপনার কাঙ্খিত অনুসন্ধান অ্যাজমা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সাইটে জানতে সক্ষম হয়েছেন।

আরো পড়ুনঃ কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button